বাংলাদেশের দার্জিলিং বলে খ্যাতি আছে বান্দরবানের। কেউ কেউ বলে ভূস্বর্গ। সৃষ্টিকর্তা যেন দুহাত ভরে সাজিয়েছেন সৌন্দর্যের এই লীলাভূমিকে। ঋতুতে ঋতুতে আলাদা হয় বান্দরবানের রূপ। বান্দরবানে ঘুরে বেড়ানোর স্পটের অভাব নেই। চাইলে এই শীতেই ঘুরে আসতে পারেন বান্দরবান থেকে। কি কি দেখবেন? কোথায় কোথায় যাবেন? আর খরচ কেমন পড়বে? চলুন জেনে নিই-
মেঘলা দিয়েই শুরু করা যাক। এই পর্যটন স্পটটিকে বলা যায় বান্দরবান শহরের প্রবেশ দ্বার। বান্দরবান শহরে ঢোকার ৫কিঃমিঃ দূরের আগেই এর অবস্থান। এই পর্যটন কেন্দ্রের হ্রদের পানিতে বোটে চড়ার ব্যবস্থা আছে, হ্রদের উপর দুটি ঝুলন্ত সেতু, উন্মুক্ত মঞ্চ, মিউজিয়াম, ক্যান্টিন ও চিড়িয়াখানা আছে। আছে পাহাড়ের চূড়ায় বসে কিংবা রাইডে চড়ে চারিদিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার অপার্থিব সুযোগ।
মেঘলার বিপরীতমুখী রাস্তার খাড়া ঢাল বেয়ে উঠে গেলেই নীলাচল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত নীলচল পর্যটন কেন্দ্র থেকেও সমগ্র বান্দরবন দেখা যায়। রাতের মেঘ মুক্ত আকাশে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন এখান থেকে। বিশেষ করে নীলাচল থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য অপূর্ব। এখান থেকে পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
বান্দরবান থেকে ৮কিঃমিঃ দূরে শৈলপ্রপাত ঝর্ণার অবস্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ সৃষ্টি এই প্রপাতে সবসময় ঝর্ণার হিমশীতল পানি বয়ে যায়। শৈলপ্রপাতের আশপাশের দুর্গম পাহাড়ের কোল ঘেষে আদিবাসী বম সম্প্রদায়ের সংগ্রামী জীবন প্রত্যক্ষ করা যাবে। পাওয়া যাবে বম জনগোষ্টির তৈরি বিভিন্ন পণ্য। বলাচলে, বছরের বেশিরভাগ সময় দেশী বিদেশী পর্যটকে ভরপুর থাকে শৈলপ্রপাত।
বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৪৭ কিঃমিঃ দূরে থানচি রোডে পাহাড়ের চ‚ড়ায় নীলগিরির অবস্থান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত এবং পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষন এই নীলগিরি। নীলগিরি যাওয়ার পথে রাস্তার দুপাশে ঘন সবুজে ঢাকা সারি সারি পাহাড়, জুমচাষ, ছোট ছোট গ্রাম আপনাকে মুগ্ধ করবে।পাহাড়ের চ‚ড়ায় প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে স্বচ্ছ মনোরম সরোবরটি বগা লেক। সমতল থেকে ১৭০ ফুট উপরে অবস্থিত লেকটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ প্রাকৃতিক লেক। এর আশেপাশে পানির কোন উৎস নেই। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস এই লেকের ভেতর ড্রাগন দেবতার বসবাস করে। এটি বাংলাদেশের একটি রহস্যময় স্থান। এটি রুমা উপজেলা থেকে প্রায় ১৭ কি.মি. দূরে অবস্থিত। বান্দরবান উপজেলায় অবস্থিত অপরূপ সুন্দর জলপ্রপাত নাফাখুম। নাফা নামের এক প্রকার মাছ দেখা যায় এখানে। মাছগুলো -স্রোতের বিপরীতে লফিয়ে লাফিয়ে ঝর্ণা পেরোবার চেষ্টা করে বলেই এই জলপ্রপাতের নাম নাফাখুম।
চিম্বুক পবর্তমালা থেকে বালিপাড়া যাওয়ার পথে থানচি রোডে নীল দিগন্ত অবস্থিত। পাহাড়ের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে জীবন নগরে পৌঁছে আশেপাশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
যেতে পারেন রিজুক ঝর্ণা দেখতে। বান্দরবান শহর থেকে ৫৪ কিঃমিঃ দূরে রুমায় অবস্থিত। প্রায় ৩শ ফুট উচু থেকে ঝরে পড়া জলপ্রপাতের রিমঝিম সুরের মুর্ছনা আর আশেপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। রিজুকের চারিপাশে মারমা, ¤্রাে, বম নৃ গোষ্ঠির বসবাস। এখানে নৌকায় ভ্রমন করতে পারেন। ঝর্ণার শীতল পানিতে গোসল করতেও পারেন।
দেশের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গের মধ্যে একটি হলো কেওক্রাডং। এর উচ্চতা ৩১৭২ ফুট। শুকনো মৌসুমে যানবাহনে বগা লেক থেকে কেওক্রাডং যাওয়া সম্ভব হলেও বর্ষা মৌসুমে শুধুমাত্র পায়ে হেটে যেতে হয়।
বান্দরবানের থানচি উপজেলায় অবস্থিত অনিন্দসুন্দর জলপ্রপাত আমিয়াখুম। পাহাড়ের বুক চিরে স্বচ্ছ পানির ধারা যেন ছুটে চলেছে অবিরাম গতিতে। বনের নিস্তবদ্ধতায় পানির কলকল শব্দ আপনাকে দরুনভাবে আনন্দ দেবে। এছাড়া আরো কিছু ঝর্ণা আছে আশেপাশে। তার মধ্যে বাকলাই ঝর্ণা, জাদিপাই ঝর্ণা, জমজ ঝর্ণা, চিংড়ি ঝর্ণা, ঝুরঝুরি ঝর্ণা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বান্দারবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় উপবন লেকে যেতে পারেন। এই লেকে রয়েছে দীর্ঘ ঝুলন্ত সেতু। নীরব নিস্তব্দ প্রকৃতি আর পাখি দেখে আপনাকে প্রাণ জুড়িয়ে যাবে।
বান্দরবানের লামা উপজেলা শহর থেকে ৭কিঃমিঃ দূরে নিরিঙ্গা পাহাড়। এটি একটি পর্যটন কেন্দ্র। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ ফুট উচু। আন্দারমানিক আর একটি নৈসর্গিক সৌন্দর্যের স্থান। বাংলাদেশ যে এত সুন্দর তা বান্দরবান না আসলে কখনো অনুভব করতে পারবেন না।